একজন অপেশাদার আগুন্তকের ‘ক’ অফিসে কয়েক সপ্তাহ :
একটি ফোরামের সাথে যুক্ত হয়ে ছিলাম যার সেন্টার অফিস বসেছিল ‘ক’অফিসে। ৪ মাসের জন্য মৌখিক ভাবে চুক্তি বদ্ধ হলেও ৬ সপ্তাহের বেশী সেখানে থাকতে পারিনি। হতে পারে ‘ক’অফিসের প্রকৃতি আমাকে উপড়ে দিয়েছে অথবা আমি নিজেই ঐ ‘ক’অফিসের সংস্কৃতি কে ধারণ করতে পারিনি। সে যাই হোক এই ৬ সপ্তাহের তীক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি।
যদি ‘ক’ অফিস কে বাংলাদেশের সাথে তুলনা করি তাহলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মিল খুজে পাব।এরা ভীষণ আন্তরিক, অতিথি পরায়ন, বšধুবতসল , সামাজিক, নিজের সংস্থার মূল্যবোধ ও ধ্যানধারনাকে আকড়ে ধরে রাখে, এরা দলবদ্ধ ভাবে কাজ করে ,এখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এক টেবিল থেকে প্রায় সব টেবিলে কথা পৌছতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট এর বেশী সময় লাগেনা। এবং সর্বোপরি এরা একে অন্যের বিষয়ে নাক গলানো কে নিজ ও প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব বলে মনে করে।। অফিসের এই বিশেষ প্রথা,আচাড়-বিশ্বাস, নৈতিকতা,জ্ঞান সব মিলিয়ে তৈরী হয়েছে ্এর সংস্কৃতি যা বৃহত্তর বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি উপসংস্কৃতি ও বলা যেতে পারে।
এই ৬ সপ্তাহে আমি যেমন ১ জোড়া চোখ দিয়ে প্রায় ৩০ জন কে পর্যবেক্ষণ করেছি ঠিক তেমনি ঐ ৩০ জনের দৃষ্টি ও কিন্তু এই অপেশাদার আগুন্তকের দিকেই ছিল।
‘ক’অফিসের ক্লিনার থেকে শুরু করে ‘এ.ই.ডি ’ সকল কেই আমি নিবীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি অংশগ্রহণ এর চাইতে পর্যবেক্ষণ কেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছি। কাজটি বেশ জটীল কারণ অণ্যদের কাজের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে , নিজের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করিয়ে , চোখ কান খোলা রেখে ঘটনাস্থল থেকে অবিরত তথ্য সংগ্রহ করা বেশ জটীল এবং সময় ¯^াপেক্ষ ব্যাপার। আমার জন্য বেশী পরিশ্রমের কারণ আমি এখানকার একজন কর্মি ও ছিলাম বটে!
‘ক’অফিসের প্রথম সপ্তাহ ছিল সম্পূর্ণ হানিমুন স্টেজের। ভীষণ আনÍরিক ছিল সকলেই, আমার যেমন তাদের সকলকে ভাল লেগেছিল ঠিক তেমনি তাদের সকলের সুদৃষ্টি ও আমার দিকে নিবদ্ধ ছিল। এক সপ্তাহ না ঘুরতেই ক্রমাগত শকিং স্টেজের দিকে ধাবিত হচ্ছিলাম। যখন দেখলাম ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে ফোরামের কাজ করতে না দিয়ে শ্রেফ একজন টাইপিষ্ট কাম পারসোনাল সেক্রেটারীর কাজ করাচ্ছিল তারা।এছাড়াও আমাকে দেয়া হয়েছিল একটি প্রাগ্ঐতিহাসিক যুগের এক কম্পিউটার, যার মনিটর টি ছিল পুরোপুরি ঝাপসা। কম্পিউটার টি ছিল ভাইরাসে ভরা। প্রতি তিন মিনিটে র্একবার হ্যাং হয়ে যেত, রিস্টার্ট নিয়ে ১৫ মিনিটের মাথায় আবার কাজ শুরু করতে পেরেছিলাম। এভাবে দেখা যেত প্রতি ৬ মিনিট কাজের জন্য প্রায় ৩০ মিনিট সময় নষ্ট হত।এছাড়া ইলেকট্রিসিটি যেত নিয়ম করে দুবার । আর যে ১-২ ঘন্টা সময় কাজের জন্য পেয়েছি তখন বসের মেইল পাঠানো এবং রানা প্লাজা ধসে তাদের বিরত্ব গাথা কাহিনি শুনত্ইে পার হয়ে গেছে। যদিও এই অব্যাবস্থা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ এর কাজে সহায়ক হয়েছিল!
আমি বুঝতে পারছিলাম যে ঠিক আমাকেই তাদের অপচ্ছন্দ বা আমার কোন অদক্ষতা তা নয় , বরং অন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান নিউট্রাল অবস্থানে থেকে আমাকে রেকমেন্ড করেছিল তাদের কে ‘ক’অফিসের প্রধানদের অপচ্ছন্দ। সে কারনে প্রতিটি ফোরাম মিটিং এ আমার কাজের গতি ধীর এবং আমাকে অদক্ষ ও অযোগ্য প্রমান করার সূক্ষ প্রয়াশ তারা চালিয়েছেন। অন্যদিকে তাদের প্রতিষ্ঠানেই আমাকে গাবষণার কাজে যুক্ত হবার আহবান ও তারা দিয়েছিল। এই দ্বৈত মানসিকতার মানুষের সাথে আমি কাজ করতে পারবনা বুঝতে পেরেছিলাম।
ফিরে যাই সেই পূর্বের আলোচনায় বাংলাদেশ ও ‘ক’অফিসের মিল ও অমিল। জাতিগত বৈশিষ্ট এই ‘ক’অফিসের সংস্কৃতিকে যে ভাবে প্রভাবিত করেছে তার কয়েকটি নমুনা তুলে ধরছি;
এরা নিজেদের অবস্থানে অনেক বেশী সন্তুষ্ট বলে এদের আত্মউন্নয়নের চেষ্টাও কম, অথবা যোগ্যতার চাইতে প্রাপ্তি বেশী ও হতে পারে।
দুটি বিরোধী মতাদর্শের নারী কর্মকর্তার উপস্থিতি লক্ষণীয়। প্রকাশ্যে এরা একে অপরের সাথে সৌজন্যতা বজায় রাখলেও ভেতরে ভেতরে এরা একে অপরের চড়ম শত্রæ। তাত্বিক ও কারিগড়ি জ্ঞান কম থাকায় এরা দুজনই টিকে থাকার জন্য কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। একজন তার পলিটিক্যাল পাওয়ার কে ব্যবহার করছে এবং অন্য জন বেশ কিছু নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য কে অবলম্বন করে টিকে আছেন।যদি একটু গভীরে গিয়ে এদের আচড়ন কে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব এরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকেন। সংসারে একাধারে মা, স্ত্রী ও আরও নানা রকম রোল প্লে করে তবেই অফিসে আসেন এবং সেখানে নিজেদের অদক্ষতা ও ঘাটতি ঢেকে রাখার জন্য একটি আর্টিফিসিয়াল বসিং ফেস তৈরী করে রাখেন। এরা নানাভাবে অধস্তনদের ভুল ত্রæটি খুজে বের করে এবং কর্মঘন্টার অতিরিক্ত সময় অফিসে অতিবাহিত করে নিজেদের যোগ্যতার প্রমান দেন।্ ফলে কর্ম ঘন্টা বেশী হলে ও কাজের গুনগত মানে ধস নেমে আসে। যেমন এদের এক জন একটি এ্যটেন্ডেন্ট শিট খোজেন দিনের অর্ধেক বেলা বসে এবং সকলকেও ঐ শিট খোজায় ব্যস্ত রাখেন।
এরা ওভার বার্ডেন্ড ।নানান আনডিউ এ্যডভান্টেজ এরা অফিশ থকে নিয়েছেন বলে প্রতিদান ¯^রূপ অফিশের সব কাজে অংশগ্রহণের চেষ্টাও তারা করেন।ক্ষমতা হাড়ানোর ভয় এদের ভেতরে কাজ করে বলে যে কোন নারী কর্মীকেই এরা প্রতিদন্ডী মনে করেন। তাতি¦ক ও কারিগরী জ্ঞানের অভাব এদের মাঝে প্রকট।শারিরীক ভাবে ক্লান্ত ও মানসিক ভাবে অসূস্থ্য। হতাশা ও অস্থিরতা এদের মাঝে বিরাজ করছে বলেই এরা অতিরিক্ত কর্তৃত্ব পড়ায়ন।
এবার আসা যাক পুরুষ কর্মিদের আচড়ন বিশ্লেষণে :
পিয়ন থেকে শুরু করে প্রধান কর্মকর্তা সকলেই অর্থব্যবস্থাপনার কাজটিতে বেশী আগ্রহী। প্রত্যেকেই তার অধস্তনের অর্থসংক্রান্ত কাজ গুলোকে ওভার লুক করে যান(সবার জন্য প্রযোজ্য নয়)।
আত্মীয় করণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ‘ক’ অফিস। এখানে আদনান, সমীর, আখতার যেমন এসেছে তেমনি আরও অনেকেই আসার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন জয় , তারেক প্রবেশ করেছে ঠিক তেমনি অনেকেরই সন্তান এই প্রতিষ্ঠাণে যোগদানের অপেক্ষায় আছে।
এতো গেল নারী পুরুষের আচড়ণের বিশ্লেষণ, এবার যদি সেকশন ভিত্তিক আচড়ন বিশ্লেষণ করি তাহলে প্রথমে আসে ডাইনিং ও কিচেন এর কথা। প্রতিদিন নানান রকমের সু¯^াদু খাবার রান্না করেন সাথী আপা আর পরিবেশণ করে গনি মিয়া। ক্লান্ত ও বিরষ বদনে হু হু করে তরকারীর দাম বেড়ে যাবার কথা সবাইকে জানান এবং সবিনয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে মিলের চার্য মিটিয়ে দেবার অনুরোধ ও তিনি করেন। দিনের পর দিন মিল চার্য না মিটিয়ে খাবার গ্রহণের প্রবণতা পুরুষ কর্মিদের মাঝেই বিদ্যমান।
একাউন্টস সেকশন :খুব সাধারণ বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত পুরুষ কর্মির হাতেই চলছে ‘ক’ অফিসের একাউন্টস সেকশন। এটা সম্ভবত পরিচালনা পরিষদের পরিকল্পনাতেই হয়েছে।
যদি‘ক’ অফিস কে একটি বনের সাথে তুলনা করি তাহলে দেখব বাঘ, সিংহ ও একদল প্রাণী আছে এখানে।পুরো বনকে নিয়ন্ত্রণ করছে বাঘ আর সিংহ এবং বাকির শুধু দল বদলের খেলায় লিপ্ত। পুরো ‘ক’ অফিস টি ই চলছে অতি মেধাবি দুই একজন ম্যানপাওয়ারের উপর। যারা ইচ্ছে করেই হয়তো এই পরিবেশের পরিবর্তণ চান না । এরা কর্তৃত্ব পড়ায়ন হলেও ভেতরে ভেতরে নিজেরাও গভীর হতাশায় নিমজ্জিত । নিজের প্রতিষ্ঠানের বাইরে টিকে থাকার লড়াইয়ে এরাও ক্লান্ত। বাঙ্গালি সামাজিক কর্তৃত্ব বোধের প্রকট প্রকাশ এই ‘ক’ অফিসে পরীলক্ষিত হয়েছে।এই কর্তৃত্বপড়ায়নতার পেছনে তাদের অন্তর্নিহিত টেনশন(টিকে থাকার লড়াই)ই কাজ করেছে বলে মনে হয়েছে।
এর পরও এরা সৃজনশীল, অনেক নতুন উদ্যোগ ও কার্যক্রম এরা গ্রহণ করে ।
১৯ অক্টোবর - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪